Thursday 5 June 2014

ইমাম গাজ্জালী (র.) - এর একটি গল্প

এক ব্যাক্তি জঙ্গলে হাটছিলেন, হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু নিয়েছে, তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন, কিছুদূর গিয়ে একটি পানিহীন কুয়া দেখতে পেলেন, তিনি চোখ বন্ধ করে দিলেন ঝাঁপ, পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি দেখে তা খপ করে ধরে ফেললেন, এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন, উপরে চেয়ে দেখলেন কুয়ার মুখে সিংহটি তাকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে, নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল এক সাপ তার নিচে নামার অপেক্ষায় চেয়ে আছে, বিপদের উপর আরো বিপদ হিসেবে দেখতে পেলেন একটি সাদা আর একটি কালো ইঁদুর তার দড়িটি কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে, এমন হিমশিম অবস্থায় কি করবেন যখন তিনি বুঝতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ তার সামনে কুয়ার সাথে লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেলেন, তিনি কি মনে করে সেই মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন, সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের গর্জনরত সিংহ, নিচের হাঁ করে থাকা সাপ, আর দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের কথা ভুলে গেলেন, ফলে তার বিপদ অবিশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ালো, এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু, যে সর্বক্ষণ আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সেই সাপটি হচ্ছে কবর, যা আমাদের অপেক্ষায় আছে, দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন, যাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকা, সাদা ইঁদুর হল দিন, আর কালো ইঁদুর হল রাত, যারা প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে আমাদে জীবনের আয়ু কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া, যার সামান্য মিষ্টতা পরখ করে দেখতে গেলেও আমাদের এই চতুর্মুখি ভয়ানক বিপদের কথা ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
(সংগৃহীত)
এই গল্পটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। ধন্যবাদ সবাইকে।




Tuesday 3 June 2014

নামাজের তাসবিহ ও দোআ সমুহের বাংলা অর্থ

আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়ি, কিন্তু নামাজে কি বলছি, কি করছি তা কিছুই জানি না। অধিকাংশ মানুষই নামাজে যে সুরা সমুহ ও তাসবিহ গুলো পড়ছে তার অর্থ জানেনা। যার কারনে নামাজে অমনযোগী হয়। মনে হয় যে তোতা পাখির মত শুধু বলেই যাচ্ছি, কিন্তু কি বলছি কিছুই জানি না, তাহলে নামাজের মাঝে আল্লাহর প্রতি বিনয়, শ্রদ্ধা, ভয়, আত্ম-সমর্পন আসবে কিভাবে?

অথচ আল্লাহ সুবহানাতাআলা বলেছেন, ধবংস ওই নামাজি যে তার নামাজ সম্পর্কে বেখবর।

নামাজে মনোযোগ আনতে হলে অবশ্যই নামাজে কি কি করছি তার অর্থ ভাল ভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। অর্থ যদি জানা থাকে এবং তা লক্ষ্য করে নামায আদায় করি, তাহলে আমাদের নামায আরো সুন্দর হবে।

নিয়তঃ
আমি কিবলামুখি হয়ে (ফজর/যোহর/আসরের………) দুই/তিন/চার রাকাত ফরয/ওয়াজিব/সুন্নত/নফল আদায়ের উদ্দেশ্য নিয়ত করলাম

তারপর আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান) বলে দুহাত বাধতে হবে। - শুরু হয়ে গেল নামাজ।

ছানাঃ
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা (সমস্ত প্রশংসা পবিত্র আল্লাহ
র জন্য)
ওয়াতাবারা কাসমুকা (তোমার নাম বরকতময়)
ওয়াতা আলা জাদ্দুকা (তুমি মহান মর্যাদার অধিকারি)
ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা (তুমি ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নেই)।

তাআউযঃ
আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম
(আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি বিতারিত শয়তান থেকে)

তাসমিয়াঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
(পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি)

তারপর সুরা ফাতিহা এবং অন্য সুরা মিলিয়ে পরতে হবে। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে

রুকু
র তাসবিহঃ
সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম (আমার মহান মর্যাদাশীল প্রভুর পবিত্রতা বর্ননা করছি) / ( আমার মহান প্রভু সকল দোষ ত্রুটি থেকে পবিত্র।)

রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তাসমি পাঠ করতে হবে

তাসমিঃ
সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ (যে আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন)

তারপর তাহমিদঃ
রাব্বানা লাকাল হামদ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)

তারপর সিজদা। সিজদার সময় পরিপুর্ন ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমি আল্লাহর কাছে পুর্নভাবে আত্মসমর্পন করছি।

সিজদার তাসবিহঃ
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা (আমার শ্রেষ্ঠ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ননা করছি)

দুই সিজদার মধ্যবর্তী দুআঃ
আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী
অর্থ: আয় আল্লাহ ! আমাকে মাফ করে দাও, আমার প্রতি দয়া করো, আমাকে সঠিক পথে চালাও, আমাকে সুস্থ রাখো এবং আমাকে জীবিকা দান করো।

এভাবে নামাজের দুরাকাত শেষে তাশাহুদ এবং চার রাকাত শেষে তাশাহুদের সাথে দুরুদ শরিফ ও দুয়া মাছুরা পরতে হয়।

তাশাহুদঃ
আত্ত্যাহ্যিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাতু
(কি মৌখিক, কি দৈহিক, কি আর্থিক সকল ইবাদাত এক মাত্র আল্লাহর জন্য/সমস্ত সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্যে। সমস্ত শান্তি কল্যাণ ও পবিত্রার মালিক আল্লাহ) আসসালামু আলাইয়কা আইয়্যহান্নবিও ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু (হে নবী, আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক) আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহিন (আমাদের উপর এবং সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন ইলাহ নেই,আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ(সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল)

দুরুদ শরীফঃ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়ালা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। (হে আল্লাহ মুহাম্মাদ(সাঃ) ও তার বংশধরদের / অনুসারীদের উপর তোমার অনুগ্রহ বর্ষন কর যেভাবে ইব্রাহিম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর অনুগ্রহ করেছিলে।নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত)

আল্লাহুম্মা বারিক্ আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আলা ইব্রহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। (হে আল্লাহ মুহাম্মাদ(সাঃ) ও তার বংশধরদের/মুহাম্মদের অনুসারীদের উপর তোমার বরকত বর্ষন কর যেভাবে ইব্রাহিম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষন করেছিলে। নিশ্চয় তুমি অতি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত)

আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসি জুল মান কাসিরাও, ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ্জনুবাকা, ইল্লা আন্তা ফাগফিরালি মাগফিরাতাম্মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম। (হে আল্লাহ, আমি আমার আত্মার উপর ক্ষতি সাধন করেছি, মাফ করার সাধ্য কারোর নাই (তুমি ব্যতিত), তুমি আমাকে সম্পুর্নরুপে মাফ করে দাও ও দয়া করো, নিশ্চয়ই তুমি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু)

দুআ কনূত
অর্থ: হে আল্লাহ,তুমি যাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছো,আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো ! যাদেরকে তুমি ক্ষমা ও সুস্থতা দান করেছো,আমাকেও ক্ষমা এবং সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছো, আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করো! তুমি আমাকে যা কিছু প্রদান করেছো, তাতে বরকত (প্রচুর্য )দান করো। তোমার মন্দ ফারসালা থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমিই তো প্রকৃত ফায়সালাকারী, আর তোমার উপর কারো ফায়সালাই চলেনা। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো, তাকে কেউ অপদস্ত করতে পারেনা। যে তোমার শত্রু হয়েছে তাকে ইয্‌যত দান করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের প্রভু, বিরাট প্রাচুর্যশীল তুমি, অতিশয় মহান তুমি!

কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুন। আল্লাহ আমাদের খাটি ভাবে আত্ম-সমর্পন করে নামাজ পড়ার তওফিক দিন আমিন।